ঢাকা প্রেসঃ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। এ সময় আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় তাকে গ্রেফতারের বিষয়টিকে অবৈধ বলে আখ্যা দেন দেশটির সর্বোচ্চ এ আদালত। খবর ডন।
শুনানি শুরুর আগে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) ১ ঘণ্টার মধ্যে ইমরান খানকে কোর্টে হাজির করার আদেশ দেন বেঞ্চ। পরে ইমরান খানকে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতর দিয়ে বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে কোর্টে হাজির করা হয়। ইমরান খানের আগমন উপলক্ষে অ্যাপেক্স কোর্টের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ ও রেঞ্জারসের কয়েকটি ইউনিট মোতায়েন করা হয়। আনা হয় বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। ১ নম্বর কোর্ট রুমে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শুধু আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার অনুমতি ছিল। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মুহম্মদ আলী মাজহার ও বিচারপতি আজহার মিনাল্লা।
শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোর্ট বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। আজকের মধ্যেই একটি যথাযথ রায় দেয়া হবে।’ এদিকে শুনানিকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের সুপ্রিম কোর্ট থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয় ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই)। শুনানি শেষে ইমরান খান তার সমর্থকদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান। তাদের দ্বারা যাতে দেশের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু দেশে নির্বাচন চাই।’ এর আগের দিন তিনি তার আইনজীবীদের বলেন, ‘দেশে নৈরাজ্য চলছে, আমরা নৈরাজ্য চাই না।’
শুনানি শুরু হলে প্রধান বিচারপতি ইমরান খানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি গ্রেফতার হওয়ার পর দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আমি দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি ইমরান খানের গ্রেফতারকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেন। তিনি পিটিআই প্রধানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হাইকোর্ট যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা আপনাকে মেনে নিতে হবে।’
শুনানিতে ইমরান খানের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, ‘ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গিয়েছিলেন ইমরান খান। এ সময় তাকে গ্রেফতার করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০০ সদস্য সেখানে উপস্থিত হন। আদালত চত্বর থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্য দিয়ে আদালত অবমাননা করেছে এনএবি।’
ইমরান খান তার নিজের বাসভবনে থাকার আবেদন জানালে তা খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কোর্টের তত্ত্ব্বাবধানে আছেন। আমরা চাই না আপনার কোনো ক্ষতি হোক।’
পিটিআই প্রধানকে শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের একটি গেস্ট হাউজে রাখা হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি। ইসলামাবাদ পুলিশ প্রধানকে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে ইমরান খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকালও উত্তাল ছিল পাকিস্তান। দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পিটিআইয়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নিহত হয়েছে আটজন। দুই হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার রাজধানী ইসলামাবাদ, পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল পিটিআইয়ের প্রধান ইমরান খানকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়। ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) জামিন নিতে গেলে দুর্নীতি দমন সংস্থা এনএবি তাকে গ্রেফতার করে। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় তাকে হেফাজতে নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একাধিক এফআইআরের জামিন চাইতে আদালতে গিয়েছিলেন ইমরান খান।