আগামীকাল শুরু হচ্ছে এটিবি মার্কেটে লেনদেন। এতোদিন আশায় বুক বেঁধেছিলেন ইউনাইটেড এয়ারের বিনিয়োগকারীগণ। কিন্তু বিএসইসি কিংবা ডিএসই এ যেন এক ধরণের প্রতারণাই করলো বিনিয়োগকারীদের সাথে! কথা ছিল এটিবি মার্কেটে ট্রেড হবে ইউনাইটেড এয়ার; কিন্তু বিএসইসি আরেকটি অদূরদর্শিতার পরিচয় দিল- ইউনাইটেড এয়ারকে লেনদেনের সুযোগ না দিয়ে। এদিকে এমন সিদ্ধান্তে আবারও বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত, চোখে পানি , এ যেন দেখার কেউ নেই! অনেক বিনিয়োগকারী বলছেন, তাহলে এমন পুঁজিবাজার রেখে লাভ কি ?
এবার আশা যাক, এই সিদ্ধান্তের ফলে কি পুঁজিবাজারের লাভ হলো ? নাকি ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার যে অতল পাতালের দিকে ধাবিত তা আরো ত্বরান্বিত করা হলো ? – সময়ই সব প্রশ্নের উত্তর দিবে।
কোম্পানির তথ্য মতে, উদ্যোক্তাদের শতভাগ মালিকানার কোম্পানিটি এখন সাড়ে ৯৭ শতাংশ মালিকানা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। অর্থাৎ কোম্পানির এ ৯৭ শতাংশ শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে বিক্রি করে দিয়ে এক হাজার ২১০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা।
এর মধ্যে প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানি থেকে প্রায় ৮২৪ কোটি ২২ লাখ টাকা তুলে নেন তারা। আরও কয়েক দফা ইউনাইটেড এয়ারের প্লেন আকাশে উড়বে— এমন আশ্বাসে বাকি শেয়ারও বিক্রি করে দেন উদ্যোক্তারা।
প্রথম দিকে পুঁজিবাজারের মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে। এরপর কী করা যায় সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।- এমন প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা আজ অনেক প্রশ্নের মুখে ?
এ প্রসঙ্গেঁ বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কমিশনের উচিত কোম্পানিটির সব সম্পদের তথ্য জানা। এরপর সম্পদগুলো বিক্রি করে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ফেসভ্যালুর সমান অর্থ বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া।
প্রথম থেকেই মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুতের বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না ইউনাইটেড এয়ারের বিনিয়োগকারীরা। তারা বরং উল্টো কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, কোম্পানিটি তালিকাচ্যুত করার আগে অন্যান্য কোম্পানির মতো ইউনাইটেড এয়ারের পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারত। এতে যদি কাজ না হতো তবে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারত। যেভাবে আলহাজ টেক্সটাইল মিলসে প্রশাসক নিয়োগ করেছে। কিন্তু তা না করে কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে আরও সুযোগ করে দিল।

প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারী মুবিনুল ইসলাম অন্তু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশন রহিমা ফুডের মতো কোম্পানিকে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে আনল। আর আমাদের কথা চিন্তা না করেই ইউনাইটেড এয়ারকে তালিকাচ্যুত করল। মূল মার্কেটে থাকলে কিছুটা হলেও সুশাসনে থাকত। কিন্তু এখন অনিয়ম করা আর সহজ হলো। কমিশন আসলে কার পক্ষে— প্রশ্ন তার।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনাইটেড এয়ার দেশের আকাশে ২০০৭ সালে ফ্লাইট চালু করে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পরের বছর ২০১১ সালে তাদের হাতে থাকা ৫০ শতাংশ শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ওই বছর শেয়ারের গড় দাম ছিল ৪৬ দশমিক ৪০ পয়সা। সেই হিসেবে পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে প্রায় ৭৬৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা তুলে নেয়।
পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ শেয়ার ২৩ দশমিক ৭০ টাকা গড় দামে বিক্রি করে তারা প্রায় এক কোটি ৩২ লাখ টাকা তুলে নেয়। ২০১৩ সালে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার ২০ দশমিক ৩১ টাকা গড় দামে বিক্রি করে ৪৫ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার ৯ দশমিক ৯২ টাকা গড় দামে বিক্রি করে প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা তুলে নেয়।
এছাড়া ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ দশমিক ০২ শতাংশ শেয়ার গড়ে ছয় টাকা দামে বিক্রি করে। সবমিলিয়ে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০টি শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৮২৪ কোটি ২২ লাখ টাকা তুলে নেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
তবে অনেক বিনিয়োগকারীগণ মনে করেন, যেহেতু এখন ৬ বছরের এজিএম সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান পরিচালনা পরিষদ অনেক সক্রিয় সুতরাং একটু সহায়তা পেলে বিমানটি আবারও আকাশে উড়তে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমত কোম্পানিটিকে মুল মার্কেটে ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপর বিনিয়োগকারীগণই এটিকে আকাশে উড়ার সকল রশদ যোগাতে পারে। যেখানে কেউ এগিয়ে আসে না সেখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ এবং কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী রিআইপিও কিংবা অন্য কোন পন্থায় বিনিয়োগ করে এটিকে সচল করতে পারে। আর না হয়, বিনিয়োগকারীদের এ আর্তনাদের বিচার একদিন হবেই হবে- সেটা একালে না হলেও পরকালে তো হবে ?
এস এম জাহাঙ্গীর আলম
লেখক ও প্রাবন্ধিক