বুধবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৫
সর্বশেষ সংবাদ
বিএসইসি বিডি
বিএসইসি বিডি

দুই ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় !

পপুলেশন ডেস্কঃ শেয়ারের দাম ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত নতুন প্রজন্মের দুই ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা আছেন চরম বিপাকে। চলতি বছর আইপিও-এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসা ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার কিনে এখন মূলধন হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন ব্যাংক দুটির শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে ব্যাংক দুটির শেয়ার মূল্য ফেস ভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে।

পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ অনুযায়ী বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যাংক দুটিকে আইপিও-এর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমতি দিয়েছে। এদের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এ জন্য তারা ৪২ কোটি ৮০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪২৫ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে। এই টাকা তুলতে কোম্পানিটি ৪২ কোটি ৫০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এই দুই ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। ফলে ক্রেতা সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় লসে শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তদারকি অভাবে অনেক দুর্বল প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে। এরপর আইপিও’র মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার পর তাদের দুর্বলতাগুলো বেরি আসছে। এসব দুর্বল কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসার কারণে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিন শেষে যার মাশুল গুনতে হচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ১৬ নভেম্বর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। লেনদেন শুরুর দিনই শেয়ারটি এক টাকা বা ১০ শতাংশ কমে ৯ টাকায় নামে। ওইদিন ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের সর্বোচ্চ মূল্য উঠেছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা। লেনদেন হয়েছিল ১১ হাজার ৮১৭ বারে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬১টি শেয়ার। যার বাজার মূল্য ছিল ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রায়।মঙ্গলবারও শেয়ারটি সেই ৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তবে ১৩ বারে মাত্র ২১ হাজার ৭৪৬টি শেয়ার হাত বদল হয়েছে।

কোম্পানিটি ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪২৫ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে। এই টাকা তুলতে কোম্পানিটি ৪২ কোটি ৫০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আইপিও শেয়ার পাওয়া বিনিয়োগকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, লেনদেনের প্রথম দিনই শেয়ারটি ফেস ভ্যালুর নিচে চলে গেছে। ১০ টাকার শেয়ার এখন ৯ টাকা। এরপরও ক্রেতা নেই। এখন না পারছি রাখতে না পারছি বিক্রি করতে। বলা যায় এটা এখন আমার গলায় কাঁটা।

প্রায় একই কথা বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রমিজ উদ্দিন আহমেদ নামে আরেক বিনিয়োগকারী। তার ভাষায়, যেকোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়ার সময় বিএসইসি যাচাই-বাছাই করে না বলেই এই অবস্থা।

একই অবস্থা ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারদের। ব্যাংকটির অভিহিত মূল্যের নিচে পড়ে আছে। এই কোম্পানিটি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু করে। অভিহিত মূল্য ১০টাকা হলেও মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৯ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে ৭০ পয়সা লসে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

একটি ব্রোকার হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এই দুটি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই এসে কান্নাকাটি করছেন। ব্যাংক দুটিতে বিনিয়োগ করে চরম হতাশায় রয়েছেন তারা। তারা বলছেন, এমন দুর্বল ব্যাংক কিভাবে আইপিওতে এলো তা বোধগম্য হচ্ছে না। বিএসইসি কর্মকর্তারা তাদের কি দেখে অনুমোদন দিয়েছে বুঝতে পারছি না।

বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, যে কোম্পানিগুলোর আইপিও’র সাইজ অনেক বড়, সাপ্লাই-ডিমান্ড দিয়েই তাদের প্রাইস ডিটারমাইন্ড হয়। অফার সাইজ বড় থাকায় ফিট ফ্লোর শেয়ার প্রথম দিক থেকেই অনেক বেশি থাকে। এ কারণে সেল প্রেশার কিছুটা বেশি হয়। এছাড়া ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কিছুটা কম। নতুন কোনো বিনিয়োগকারী ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী না। এ কারণে ওই শেয়ারে কিছুটা অনাগ্রহ থাকতে পারে।

তিনি বলেন, পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ অনুযায়ী কমিশন কোম্পানি দুটিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক যেহেতু প্রাইমারি রেগুলেটর বিষয়টি তারাও দেখে। সবকিছু দেখে প্রসপেক্টাসে ডিসক্লোজ করে আসছে। তাছাড়া একটা নির্দিষ্ট পারসেন্টেজের উপরে আন্ডার সাবস্ক্রিপশন হলে আবেদন বাতিল হয়ে যায়। যেহেতু এটা বাতিল হয়নি সেই হিসাবে লিস্টেড হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক ভালো ভালো ব্যাংকের শেয়ারের দামও ফেস ভ্যালুর কাছে। মার্কেটে যখন একটু লিকিউডিটি বাড়বে, ইনভেস্টরের বেজ স্ট্রং হবে এবং মার্কেট আপট্রেন্ডে থাকবে তখন গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক বা ইউনিয়ন ব্যাংক সবই ভালো লেভেলে থাকবে। প্রধানত দেখতে হবে, কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিচ্ছে কিনা বা সক্ষমতা আছে কিনা। যদি লভ্যাংশ না দিতে থাকে তখন কী করা যায় এটা কমিশন হয়তো ভেবে দেখবে।

রেজাউল করিম বলেন, কোনো শেয়ার ফেস ভ্যালুর নিচে আসলেই যে সে কোম্পানি খারাপ হয়ে গেল আমরা এভাবে চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি কোম্পানির ফাইন্যান্সিয়াল পজিশন ভালো কিনা। তারা যদি লভ্যাংশ দিতে পারে তাহলে ঠিক আছে। শেয়ারের প্রাইসের ব্যাপারে কমিশনের কিছু করার থাকে না। ১০ টাকার শেয়ার যখন ৮০-৯০ টাকায় ট্রেড হয় তখনও আমরা কিছু বলি না। অভিহিত মূল্যের নিচে নামলেও আমাদের কিছু করণীয় থাকে না। তবে কোম্পানি দুটি কমপ্লায়েন্স অনুযায়ী চলছে কিনা কমিশন সেগুলো দেখবে।

বিষয়টি নিয়ে গ্লোবাল ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মনঞ্জুরুল হোসাইন বলেন, ‘মার্কেট ভালো হলে তখন আমাদের ব্যাংকের ফান্ডামেন্টাল শেয়ার হিসাবে দাম বেড়ে যাবে। আমরা কোনো ম্যানুপুলেশনে নেই। আইসিএমএবি-এর কাছ থেকে আমরা নতুন অনুমোদন পাওয়া নয়টি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম ব্যাংক। কমপ্লায়েন্স ব্যাংক হিসাবে আমরা পুরস্কার পেয়েছি। মার্কেট ঠিক হলে আমাদের শেয়ারপ্রাইজও ঠিক হয়ে যাবে।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা নিজেরাও টুকিটাকি শেয়ার কেনাবেচা করি। কারণ পুঁজিবাজারের স্বার্থে আমরাও শেয়ার কিনে লোকসানে আছি। তবে আমরা দৃঢ় আশাবাদী, বিএসইসির চেয়ারম্যান নানা ভাবে মার্কেট ভালো করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ব্যাংকের শেয়ার ব্লুচিপ শেয়ার এগুলো কখনো খারাপ হবে না। যদি বিনিয়োগকারীরা একটু ধৈর্য ধরলে ভালো রিটার্ন পাবেন বলেই আমরা আশাকরছি।

বিষয়টি জানতে ইউনিয়ন ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি আলী হোসাইন ভূইয়া এসিএস বলেন, মার্কেটে প্রায় ২৫০ কোম্পানি এখন ফ্লোর প্রাইজে আছে। যেকারণে মার্কেট খারাপ যাচ্ছে। এরপর আমরা ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বিএসইসি যদি সেটার অনুমোদন দেয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। তবে মূলধন হারানোর কোনো আশঙ্কা নেই বলেও তিনি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন।

About admin

Dhakapressbd.com is a online newspaper.

Check Also

শেয়ার বাজার

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে যেসকল বীমা কোম্পানিতে। ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে যেসকল বীমা কোম্পানিতে

bo-account

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বেড়েছে ৪ হাজারের উপর। ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

পুঁজিবাজারে বিনিয়েঅগকারী বেড়েছে ৪ হাজারের উপর

বিএসইসি

মেট্রো স্পিনিংয়ের উৎপাদন এক বছর বন্ধ থাকবে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মেট্রো স্পিনিংয়ের উৎপাদন এক বছর বন্ধ থাকবে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আর্থিক প্রতিবেদন

সপ্তাহ জুড়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাম করেছে ৩ কোম্পানি।

সপ্তাহ জুড়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাম করেছে ৩ কোম্পানি।

লভ্যাংশ ঘোষণা

তিন কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা। ১১ আগস্ট ২০২৩

তিন কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা। ১১ আগস্ট ২০২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights