কানাইঘাট প্রতিনিধি: রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পরই দিনের বেলায় চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিনকে চরম হেনস্থা করা হয়েছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ৬ নং কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজ (১১ মে ২০২৫) দুপুরে ইউনিয়নের চটিগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্প দেখতে যান। সেখানে একটি রাস্তার কাজের হিসাব চান গ্রামবাসী ও স্থানীয় জনতা। এরই এক পর্যায়ে রাস্তার কাজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে এবং আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে চটিগ্রাম জামে মসজিদের সামনে উনাকে হেনস্থা করা হয়। আফসার উদ্দিনকে মারধর করতে থাকে স্থানীয় কিছু লোক। যারা মারধর করেন তারা সবাই বিএনপিপন্থী এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুনের অনুসারী বলে জানা গেছে।
সিলেটের কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা এবং মানব সম্পদবিষয়ক সম্পাদক আফসার উদ্দিন আহমদকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার দুপুরে ইউনিয়নের চটি গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে যেতে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় এলাকার মসজিদে গেলে কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ তাঁকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বসে বেশ কিছু সময় কথাবার্তা হয়। এ সময় সেখানে এলাকার লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হেনস্থার কয়েক সেকেন্ডের একটা ভিডিও ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । তবে ভিডিওতে ধারণ করা সময়ের চাইতে আরো অনেক বেশি সময় নিয়ে মারধর করে স্থানীয় কিছু লোক। এই ঘটনা ঘটে দুপুর ১২:৩০ এর দিকে। এই সময় আফসার উদ্দিন বার বার অনুরোধ করতে থাকেন তাকে যেন আর মারা না হয়। তিনি কান্নাকাটিও করেন। ভিডিও ধারণ করার সময় ও ছবি উঠানোর সময় অনুরোধ করতে থাকেন, ভিডিও যাতে ধারণ করা না হয় এবং ছবি যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া না হয়। উনার অনুনয়-বিনয়ে সাড়া না দিয়ে মারধরকারীরা কিল-ঘুষি দিতে দিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে পাশের গ্রাম ছোটদেশ গ্রামে নিয়ে যায়। বিএনপি নেতা এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর উনার কাছে আফসার উদ্দিনকে সোপর্দ করা হয়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, হেনস্থা ও মারধরের শিকার চেয়ারম্যান বসে আছেন মামুন চেয়ারম্যানের সামনে তাঁর গৃহে এবং মামুন চেয়ারম্যান বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কথা বলছেন । চেয়ারম্যানের বাড়িতে দুই ঘন্টা আটক রাখার পর আফসার উদ্দিনকে কানাইঘাট থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে গত বছর ছোটদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের সময় নানা কাহিনী করেন। এতে এলাকাবাসী তার উপর ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি আরো অনেক কিছু করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তবুও একজন রানিং চেয়ারম্যানকে এভাবে হেনস্থা করার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। তাকে এভাবে হেনস্থা করা এবং কিল-ঘুষি দিতে দিতে কলার ধরে বিএনপি নেতার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দা জানাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, উনাকে ধরে মারধর না করে শুরুতেই পুলিশে সোপর্দ করা যেতো। কিন্তু এভাবে মারধর করা খুবই বাজে কাজ হয়েছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে স্থানীয় ওই কিছু লোক অন্যায় করেছেন। এক ইউপি চেয়ারম্যানকে এভাবে মারধর করার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ক্ষমতার গরমে অতীতে যারা জুলুম-অত্যাচার ও অন্যায় করেছে, এই ঘটনা সেই পতিত স্বৈরাচারের পদাংক অনুসরণের মতো হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
এদিকে, চেয়ারম্যানকে হেনস্থার ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আফসার উদ্দিনের বোকামির কথাও তুলে ধরছেন কেউ কেউ। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে এভাবে এলাকায় যাওয়ায় তার রাজনৈতিক অপরিপক্কতা ফুটে উঠেছে বলে কারো কারো অভিমত। নৌকা প্রতীকের এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়েছে কিছুদিন আগে। মামলা থাকাবস্থায় এভাবে প্রকাশ্যে যাওয়া তার নির্বুদ্ধিতা বলে মনে করছেন অনেকে।
এই ঘটনার পর পর কানাইঘাট উপজেলায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার আরো বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের লোকজনের উপর হামলা হওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের কেউ বাহিরে বের হচ্ছেন না। অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। গোপন সূত্রে জানা গেছে, এভাবে আওয়ামী লীগের আরো অনেককে হেনস্থা করার প্রস্তুতি নিয়ে আছেন অনেকে। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কাউকে পেলেই ধরে পিটিয়ে তারপর পুলিশে সোপর্দ করবেন– নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন কথা বলেছেন একজন।
কানাইঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু সায়েম বলেন, কানাইঘাট সদর ইউপির চেয়ারম্যানকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
Dhakapresbd Trusted Online News Portal