মিসবাহুল ইসলাম চৌধুরীঃ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গোঠাটিকর এলাকায় সুরমা নদী থেকে আটককৃত পাথরবোঝাই ৯টি স্টিলবডি নৌকা নিয়ে চলছে নানা মিশন। এক পক্ষ নৌকাগুলো ছাড়িয়ে নিতে চালাচ্ছে নানা তৎপরতা। অপর পক্ষ নৌকাগুলো আটক রেখেই তাদের সব হিসেব-নিকেশ মিলাতে চায়। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সিলেটজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার পাসপোর্ট অফিসের কাছে নৌকাগুলো আটক করে পুলিশে দেয় জনতা। বিপুল পরিমাণ এই পাথর লোভাছড়া থেকে লুট করে পাচার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছেন নৌকা আটককারী লোকজন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের মোগলাবাজার থানার ওসি ফয়সাল আহমদ। তিনি জানান, গোটাটিকর এলাকার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন পাথরবোঝাই কয়েকটি নৌকা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। যারা পাথরবোঝাই নৌকা আটক করেছেন তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থানায় জমা দিয়েছেন এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে, পাথরের মালিক দাবিদার পিয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী জেএ আজমও পাথর ছাড়িয়ে নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করেছেন। আমরা দু’জন বিজ্ঞ আইনজীবির সহায়তা নিয়ে উভয়পক্ষের কাগজ পর্যালোচনার মাধ্যমে পাথরের বৈধতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে কানাইঘাটের লোভাছড়া থেকে জব্দকৃত বিপুল পরিমাণ পাথর ৯টি স্টিলবডি নৌকায় করে সুরমা নদী দিয়ে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। নৌকাগুলো দক্ষিণ সুরমার পাসপোর্ট অফিসের কাছে আসার পর স্থানীয় লোকজন আটক করেন। তারা নৌকাগুলো তীরে নোঙর করে থানাপুলিশকে খবর দেন। পরে মোগলাবাজার থানাপুলিশ গিয়ে পাথরসহ নৌকাগুলো জব্দ করে।
দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরের সামি এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী নজরুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালের জুলাই মাসে লোভাছড়া কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করে মজুদ করা প্রায় এক কোটি ঘনফুট পাথর জব্দ করে প্রশাসন। পাঁচ বছর পর খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) ৫৬ লাখ ঘনফুট পাথর গোপন করে ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এ ঘটনায় তিনি জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের ধারস্থ হন। অভিযোগ বিচারাধীন থাকাবস্থায় আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিএমডি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে পিয়াস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জব্দকৃত ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর বিক্রি করে দেয়। এর বিরুদ্ধেও তিনি আদালতের ধারস্থ হয়েছেন।
নজরুল অভিযোগ করেন, বিএমডি ৪৪ লাখ ঘনফুট পাথর নিলাম করলেও মূলত বিক্রি করেছে ১ কোটি ঘনফুট পাথর। গোপন যোগসাজশে বিএমডি ৫৬ লাখ ঘনফুট সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ ও ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তমিজ উদ্দিন চেয়ারম্যান। তারা পিয়াস এন্টারপ্রাইজের নাম ব্যবহার করে ’সাগর চুরি’ করছে। এখন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তারা লোভাছড়ায় জব্দকৃত ১ কোটি ঘনফুট পাথর পাচারের চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে পাচারকালে ৯টি নৌকাবোঝাই পাথর আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, লোভাছড়া পাথর কোয়ারির নিলামগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ‘পিয়াস এন্টারপ্রাইজ’-এর স্বত্ত্বাধিকারী জেএ আজম দাবি করেছেন,‘আটক করা পাথরগুলো নিয়মিত নিলামের মাধ্যমে ক্রয়কৃত এবং এসব পাথরের সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. সজিব খান জানিয়েছেন, সিলেটের কোয়ারিগুলোতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। সুরমা নদী থেকে পাথরবোঝাই কয়েকটি নৌকা আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
ঢাকপ্রেসবিডি/২০২৫